অন্যের অধিকার হরণকারী পাপের তওবা প্রসঙ্গে
পূর্বের একটি লেখায় আমি তওবার ৫টি শর্ত নিয়ে লিখেছিলাম। সেখানে উল্লেখ করেছিলাম যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও হক নষ্টের যে পাপ তার তওবার বিষয়টি জটিল। এখানে শায়খ সালেহ ইবন আল-‘উসায়মীন রিয়াদুস-সালেহীনের ব্যাখ্যায় এই প্রসঙ্গে যা বলেছেন সেটা সরাসরি অনুবাদ করছিঃ
আর যদি পাপকাজটি হয়ে থাকে তোমার আর অপর কোনো স্রৃষ্টির মাঝে সেক্ষেত্রে আগে দেখা দরকার সেই অন্যায়টি কী ধরণের। সেটা যদি অর্থ বা সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেই অর্থ তার হকদারকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই হক ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তওবা কবুল করা হবে না। উদাহরণস্বরুপ তুমি যদি কারও অর্থ চুরি করে থাকো এবং এখন তওবা করতে চাও, তাহলে অবশ্যই সেই ব্যক্তির কাছে তার অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে।
তোমার কাছে কেউ অর্থ গচ্ছিত রেখেছিলো। পরে তুমি সেই আমানত অস্বীকার করলে। অতঃপর তুমি তওবা করতে চাইলে। এখন তোমার করণীয় হলো তার কাছে যাওয়া এবং স্বীকার করা যে তোমার কাছে তার টাকাপয়সা ছিলো যাতে সে তার অর্থ ফেরত পেতে পারে। যদি সে এর মাঝে মারা গিয়ে থাকে তবে তোমার কাজ হবে তার উত্তরাধিকারের কাছে সেটা অর্পণ করা। যদি সেই ব্যক্তি হারিয়ে গিয়ে থাকে এবং তার অবস্থান তোমার না জানা থাকে তাহলে সেই অর্থ তার হয়ে দান করে দাও। আল্লাহ্ তাকে জানেন, তিনি সেটাকে তার হয়ে আদায় করে নেবেন।
যদি তোমার পাপকাজটি অন্যের গায়ে হাত তোলার মতো কিছু হয়ে থাকে তাহলে তার কাছে যাও এবং তাকে সুযোগ করে দাও তোমার গায়ে অনুরূপ ভাবে হাত তোলার। যদি তুমি তাকে পিঠে আঘাত করে থাকো তাহলে তার দিকে পিঠ পেতে দাও। অথবা যে জায়গাতে আঘাত করেছো সেটাই এগিয়ে দাও যাতে সে বদলা নিতে পারে। কেননা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেনঃ “এবং মন্দের প্রতিদান হচ্ছে অনুরূপ একটি মন্দ।” [আশ-শূরাঃ ৪০] তিনি আরও বলেনঃ “আর যে তোমাদের হেনস্থা করবে তোমরা তাকে সেভাবেই হেনস্থা করো যেভাবে সে তোমাদের করেছে।” [আল-বাকারাহঃ ১৯৪]
যদি মন্দ কাজটি কথা দিয়ে হয়ে থাকে বা এমন কোনো কষ্ট যা মুখনিঃসৃত – যেমন তুমি তাকে মানুষের সামনে গালমন্দ করেছো বা তাকে অপদস্থ করেছো মৌখিক ভাবে। এক্ষেত্রে তোমাকে অবশ্যই তার কাছে যেতে হবে এবং এমন একটি সমঝোতায় আসতে হবে দুজনকেই যাতে সে তোমার ব্যাপারে আর অভিযোগ না পুষে রাখে। এমনকি যদি সে তোমাকে বলে যে আমাকে এত এত টাকা দিতে হবে নতুবা তোমায় মাফ করবো না, তাহলে তাই দিয়ে দাও তাকে!
যদি তুমি গীবত করে থাকো কারও ব্যাপারে – অর্থাৎ তুমি কারও ব্যাপারে তার অবর্তমানে কথা বললে বা তার ব্যাপারে কটু কিছু বললে যখন সে ছিলো না – তো এই ব্যাপারে ‘উলামাদের মাঝে মতভেদ আছে। একদল ‘উলামা বলছেন যে তোমাকে অবশ্যই তার কাছে যেতে হবে এবং বলতে হবে যে হে অমুক আমি তোমার ব্যাপারে মানুষের কাছে এই এই বলেছি, এখন আমি চাই যে তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং অব্যাহতি দাও। আরেক দল বলছেন যে না তার কাছে যেওনা বরং ব্যাপারটিতে আরও কথা রয়েছে। যদি সেই ব্যক্তি ইতিমধ্যেই জেনে গিয়ে থাকে এই গীবতের ব্যাপারে তাহলে তার কাছে যাওয়া ও ক্ষমা চাওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। তবে সে যদি এই ব্যাপারে না জেনে থাকে তাহলে আর তার কাছে গিয়ে কাজ নেই। বরং তার জন্য আল্লাহ্র কাছে ইস্তিগফার করো (অর্থাৎ তার কৃত গুনাহের ব্যাপারে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো) আর যেই বৈঠকে তুমি তার ব্যাপারে কটু কথা বলতে সেখানে গিয়ে তার ভালো দিকগুলো নিয়েও বলো। এই দ্বিতীয় মতটিই সঠিক। যদি গীবতের ব্যাপারে লোকটি না জেনে থাকে তাহলে এটাই যথেষ্ট যে তুমি একই মানুষদের কাছে তার ভালো ব্যাপারগুলো তুলে ধরবে এবং তার জন্য ক্ষমা চাইবে আল্লাহ্র কাছে। বলতে পারো যে “আল্লাহুম্মাগফির লাহ” (اللهم اغفر له) অর্থাৎ “হে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিন!” যেমনটি একটি হাদীস আছেঃ “কারও গীবত তুমি করে থাকলে এর কাফ্ফারা হলো তার জন্য ক্ষমা চাওয়া।” [দূর্বল বা দা’ঈফ হাদীসঃ আল-‘আজলূনী এটিকে বর্ণনা করেছেন “কাশফুল-খাফা”তে (২/১৪৫)]
অতএব মোদ্দা কথা হলো অন্যের হক নষ্টকারী পাপের ক্ষেত্রে তওবা করতে হলে সেই হক তার পাওনাদারকে ফিরিয়ে দিতেই হবে।
[শারহ্ রিয়াদিস-সালেহীন – শায়খ সালেহ ইবন আল-‘উসায়মীনঃ পৃঃ ৩৩, প্রঃ মুআসসাতুর-রিসালাহ নাশিরূন]
Asif Shibgat Bhuiyan's Blog
- Asif Shibgat Bhuiyan's profile
- 9 followers

