চিলেকোঠার সেপাই Quotes
চিলেকোঠার সেপাই
by
Akhteruzzaman Elias1,342 ratings, 4.43 average rating, 143 reviews
চিলেকোঠার সেপাই Quotes
Showing 1-6 of 6
“শ্যামবর্ণের রোগা ভাঙ্গা গালওয়ালা এই লোকটাকে ওসমান অনেকবার দেখেছে। কোথায়? এই বাড়ির সিঁড়িতে? তাই হবে। আরো অনেক জায়গায় এর সঙ্গে দ্যাখা হয়েছে। কোথায়? স্টেডিয়ামে? হতে পারে। গুলিস্তানের সামনে সিনেমার পোস্টার দেখতে দেখতে? হতে পারে। পল্টন ময়দানের মিটিংযে? হতে পারে। ভিক্টোরিয়া পার্কে? আরমানিটোলার মাঠের ধারে ? ঠাটারিবাজারের রাস্তার ধারে বসে শিককাবাব খেতে খেতে? হতে পারে। বলাকা সিনেমায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পেচ্ছাব করতে করতে? হতে পারে। নবাবপুরে অনেক রাতে ঠেলাগাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে হালিম খেতে খেতে? হতে পারে। আমজাদিয়ায় পাশের টেবিলে তর্ক করতে করতে? হতে পারে। মুখটা তার অনেকদিনের চেনা।”
― চিলেকোঠার সেপাই
― চিলেকোঠার সেপাই
“সন্ধ্যাবেলা নিউ মার্কেট থেকে একা একা ঘরে ফেরার সময় ওসমান দেখত পাওয়ার স্টেশন এর চিমনির মাথায় ১ টি লাল আল কোনও গ্রহের মত স্থির হয়ে জ্বলছে । ওই আলোর দিকে তাকিয়ে নির্জন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে রঞ্জউর খুব মন খারাপ করতো । ওখানে চাকরি করতো ওর ভাই তালেব, কথা নাই বার্তা নাই ওখান থেকে বেরিয়ে মিছিলে ঢকার অপরাধে নীলক্ষেতে তাকে গুলি করা হয়েছে ।”
― চিলেকোঠার সেপাই
― চিলেকোঠার সেপাই
“এমন তো হতে পারে জেলখানার কাছে পৌঁছুলে এই ঢলের মুখে ভেঙে পড়লো জেলখানার মস্ত উঁচু দেওয়াল! হতে পারে না? ভেঙে পড়লো জেলখানা, জেলখানার নিচে লুকিয়া থাকা ইব্রাহিম খাঁর দুর্গ, সাহাজাদা খুররমের দুর্গ?”
― চিলেকোঠার সেপাই
― চিলেকোঠার সেপাই
“স্বাধীনতা! মাউরাগো হাত থাইকা বাঁচার উপায় ঐ একটাই!”
― চিলেকোঠার সেপাই
― চিলেকোঠার সেপাই
“১০০ বছরেরও আগে বিদ্রোহী সিপাহিদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য নবাব আব্দুল গনিকে দিয়ে পোঁতানো পামগাছ বা সেইসব পামগাছের বাচ্চারা মানুষের স্লোগানে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি বলে আস্তে আস্তে হাই তোলে।”
― চিলেকোঠার সেপাই
― চিলেকোঠার সেপাই
“এরা কে? তার মানে, অনেক কাল আগেকার মানুষও কি মিছিলে যোগ দিয়েছে? ঐ তো, মিছিলের মাঝখানে ইসলাম খাঁর আমলের খাটো-ধুতি-পরা ঢাকাবাসী! এমনকি তারো আগে চালের বস্তা বোঝাই নৌকা বেয়ে যারা সোনারগাঁও যাতায়াত করতো তারাও এসেছে। বাঙলা বাজার, তাঁতীবাজারের মানুষ লুপ্ত-খালের হিম হৃদপিণ্ড থেকে উঠে এসেছে? ঐ তো ইব্রাহিম খাঁর আমলে শাহজাদা খসরুর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পাগড়ি-পরা সেপাইরা। শায়েস্তা খাঁর টাকায়-আট-মন-চালের আমলে না-খেয়ে-মরা মানুষ দেখে ওসমান আঁতকে ওঠে। ৩০০ বছর ধরে তাদের খাওয়া নাই- কালো চুলের তরঙ্গ উড়িয়ে তারা এগিয়ে চলে। মোগলের হাতে মার-খাওয়া, মগের হাতে মার-খাওয়া, কোম্পানীর বেনেদের হাতে মার-খাওয়া - সব মানুষ না এলে কি মিছিল এত বড়ো হয়? রেসকোর্সের কালীবাড়ির ইটের শুকনা পড়ত খুলে খাঁড়া হাতে নেমে এসেছে মারাঠা পুরোহিত, মজনু শাহের ফকিররা এসেছে, ঐ তো বুড়ো আঙুল-কাটা মুষ্ঠির ঘাই ছুঁড়তে ছুঁড়তে যাচ্ছে মসলিন তাঁতী, তাদের কালো কালো খালি গা রোদে ঝলসায়। ৪০০০ টাকা দামের জামদানী-বানানো তাঁতীদের না-খাওয়া হাডডিসার উদোম শরীর আজ সোজা হেঁটে চলেছে। সায়েবদের হাতে গুলিবিদ্ধ বাবুবাজার মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিন মুসল্লিরা চলেছে, বিড়বিড় করে আয়াত পড়ার বদলে তারা আজ হুঙ্কার দিচ্ছে, 'বৃথা যেতে দেবো না!' লালমুখো সাহেবদের লেলিয়ে-দেওয়া নবাব আবদুল গনি-রূপলাল মোহিনীমোহনের শ্বাদন্তের কামড়ে-ক্ষতবিক্ষত লালবাগ কেল্লার সেপাইরা আসে, ভিক্টোরিয়া পার্কের পামগাছ থেকে গলায় দড়ি ছিঁড়ে নেমে আসে মীরাটের সেপাই, বেরিলির সেপাই, স্বন্দীপ-সিরাজগঞ্জ-গোয়ালন্দের সেপাই। না হে, তাতেও কুলায় না। যুগান্তর অনুশীলনের বেনিয়ান ও ধুতি-পরা মাতৃভক্ত যুবকেরা আসে, তাদের মাঝখানে কলতাবাজারে নিহত ছেলে ২টিকে আলাদা করে চেনা যায়। নারিন্দার পুলের তলা থেকে ধোলাই খালের রক্তাক্ত ঢেউ মাথায় নিয়ে চলে আসে সোমেন চন্দ। ঐ তো বরকত! মাথার খুলি উড়ে গেছে, দেখে একটু ভয় পেলেও ওসমান সামলে ওঠে। এত মানুষ! নতুন পানির উজান স্রোতে ঢাকার অতীত বর্তমান সব উথলে উঠেছে আজ, ঢাকা আজ সকাল-দুপুর-বিকাল-রাত্রি বিস্মৃত, তার পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর দক্ষিন নাই, সপ্তদশ-অষ্টাদশ-উনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর সকল ভেদচিহ্ন আজ লুপ্ত। সীমাহীন কাল সীমাহীন স্থান অধিকারে জন্য ঢাকা আজ একাগ্রচিত্ত। ওসমানের বুক কাঁপে; এই বিশাল প্রবাহের সঙ্গে সে কতোদূর যেতে পারবে? কতোদূর? গোলক পাল লেনের মুখে কলের নিচে কাঁপতে-থাকা কলসি যেমন পানিতে ভরে স্থির হয়, আমাদের ওসমান গনির বুকটাও দেখতে দেখতে পূর্ণ হলো, এই অবিচ্ছিল স্রোতধারার ক্ষুদ্রতম ১টি কণা হয়েও তো সেই এই হৃৎপিন্ডে তাপ বোধ করতে পারছে। তাই বা কম কিসে? ভরা-বুকে মুষ্টিবধ হাত তুলে সে হুঙ্কার দেয়, 'বৃথা যেতে দেবো না'।”
― চিলেকোঠার সেপাই
― চিলেকোঠার সেপাই
